চার দিন পর মেয়েকে খুঁজে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি
সাইফুল ইসলাম চারদিন ধরে মেয়ের কোনো খোঁজ পাননি। এরপর মাদ্রাসায় গিয়ে মেয়েটিকে পাওয়া যায়নি। তিনি যে মাদ্রাসায় পড়তেন তার নিচতলা সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। চারপাশে এত পানি ছিল যে সাইফুল মেয়েটিকে খুঁজতে মাদ্রাসার দিকে যেতে পারেনি। শিক্ষকদের মোবাইল ফোনও বন্ধ ছিল।
রোববার পানি কমার পর ফেনী সদরের লালপোল এলাকার মাদ্রাসায় আসেন সাইফুল। নৌকায় করে মাদ্রাসায় গিয়ে মেয়েটিকে দেখতে পান। বুকে টেনে নিলেন। পরে সাইফুল কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রথম আলোয় তিনি বলেন, মেয়ের জন্য স্ত্রীর কান্না থামছে না। মেয়েটি কেমন ছিল, কী খাচ্ছিল তা জানা যায়নি। অবশেষে তাকে পাওয়া গেল।
সাইফুল জানান, তার তিন মেয়ে। বাড়িটি সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। অন্যের জমিতে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে তিনি মেয়েদের পড়াচ্ছেন। ছোট মেয়ে ওই মাদ্রাসার হিফজ শাখায় লেখাপড়া করত। নাম সাদিয়া আক্তার।
চারদিন আগে বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় সাইফুলের পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়। গত দুদিন ধরে তিনি সেখানে ত্রাণ খাবার খেয়েছেন। খাবারের মধ্যে ছিল বিস্কুট, মুড়ি, চিড়া। তার মেয়ে সাদিয়াও গত চার দিন ধরে মাদ্রাসায় শিক্ষকদের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে তিনি ত্রাণের খাবার খান।
সাইফুল এখন ভাবছে পানি কমার পর কিভাবে আবার ঘর পরিষ্কার করা যায়। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে টিন ও বেড়া দিয়ে ঘর মেরামত করেছি। এতে খরচ হয় দেড় লাখ টাকা। অনেক কষ্টে এই টাকা জোগাড় করি। নতুন বাড়ি বানানোর সামর্থ্য নেই। কাপড় নিয়ে ঘর থেকে বের হলাম।
সাইফুলের বাড়ি ফেনীর দাদের পোল এলাকায়। তিনি বলেন, গ্রামের অবস্থা ভালো নয়। রাস্তাঘাট আগেই ভেঙে গেছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে।
বন্যার পানি উঠার পর কোথায় উঠবে ভেবে পাচ্ছে না নুরুন্নাহার বেগম, রাশেদা আক্তার, নাজমা আক্তার ও বাহার মিয়ার পরিবার। শেষ পর্যন্ত উপায় না দেখে সবাই মিলে মহিপাল এলাকায় একটি ট্রাকে উঠে যান। গত বুধবার থেকে তারা সেখানে অবস্থান করছেন। নুরুন্নাহার বেগম বলেন, তারা কিছুই বের করে আনতে পারেনি। সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে।
রাশেদা আখতারের অবস্থা বোঝাতে নানা কথা বলেন। তার মতে, সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তারা দাঁড়াতে পারে না। তাদের সব স্বপ্ন শেষ।