ছন্দে না থাকা বাবর এদিন ছন্দে ফেরার কিছুটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন
সাকিবের আর্মারস, বলটা একটু নিচু থাকে বাদে উপরের দিকে। সঠিক সময়ে ব্যাট হাতে নামাতে পারেননি বাবর আজম। সোজা গিয়ে তার প্যাডে বলুন। বোঝেন নন-স্ট্রাইকার মোহাম্মদ রিজওয়ান। আম্পায়ার আউট দেওয়ার আগে মাথায় হাত দেন। রিজওয়ান বুঝেছেন, বাবরকেও বুঝতে বাকি রাখা উচিত নয়। রিভিউ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে ৩১ রানে ফেরেন বাবর।
ছন্দে না থাকা বাবর কিছুটা ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েছেন। খেলেছেন ৭৭ বল, মেরেছেন দুটি চার। অবশেষে সাকিবের দুর্দান্ত ডেলিভারির কাছে হার মানলেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে ভালো শুরুর পর এমন উইকেট দেওয়া বাবরের জন্য নতুন না হলেও নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে!
বাবরের শেষ টেস্ট ফিফটি ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তারপর এই সংস্করণে বাবর খেলেছেন ১৪টি ইনিংস। যেখানে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৪১ রান, অস্ট্রেলিয়া সফরে। এই টেস্টের প্রথম ইনিংস পর্যন্ত ১৪ইনিংসে বাবরের গড় ছিল মাত্র ২১.৮৫। কিন্তু বাবর ১৪ ইনিংসের মধ্যে ১০ ইনিংসে ২০ রানের বেশি করেন। তার মানে সে শুরুটা করছে। ১৪ ইনিংসে একটানা ব্যর্থতা সত্ত্বেও, বাবর এখনও টেস্টে ৪৪.৮৯ গড়।
এই গড় যেকোনো ব্যাটসম্যানকে আসলে ভালো বল বলা যেতে পারে। কিন্তু কেউ বাবরকে শুধু ‘ভালো’র তালিকায় রাখতে চান না বা তিনি নিজেও শুধু ‘ভালো’ খেতাব পাওয়ার জন্য ক্রিকেট খেলেন না। ২৯ বছর বয়সী বাবরকে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। বিরাট কোহলি, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন, স্টিভ স্মিথের সঙ্গে তার তুলনা। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠার ক্ষমতাও বাবরের আছে। এর আগেও তিনি প্রমাণ করেছেন।
বিষয়টি সংখ্যা দিয়ে আরও চিত্রিত করা যেতে পারে। ২০১৯ সালের শুরু থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত টেস্টে বাবরের গড় ছিল 60 এর কাছাকাছি। এই সময়কালে অস্ট্রেলিয়ায় বাবরের গড় 50 এর বেশি, 52.50। বাবর ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৪৮ গড়ে, শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৭০ এবং দেশের মাটিতে ৭৫ গড়ে ব্যাট করেছেন। বাবরকে প্রায়ই জিম বাবর বলে ট্রোল করা হয়। কিন্তু এই সময়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ইনিংস ব্যাট করার পর বাবর করেন মাত্র ২ রান।
কিন্তু 2022 সালের ডিসেম্বরের পর সেই পতন! গত বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া সফরে একের পর এক ইনিংসে হতাশ বাবর। গত বছরের ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মেলবোর্ন টেস্টের কথাই ধরুন। সেই টেস্টে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ৩১৭ রান। একপর্যায়ে রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ১৪৬। ৭ উইকেট হাতে রেখে পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৭১ রান।
পুরো দেড় দিন বাকি থাকলেও চিন্তিত ছিল না পাকিস্তান। সবচেয়ে বড় কথা ক্রিজে সৌদ শাকিলের সঙ্গে ছিলেন বাবর। ক্রিজে পুরোপুরি থিতু হয়েছিলেন। ৭৮ বলে ৪১ রানে ব্যাট করছেন তিনি। ঠিক তখনই বাবরের স্টাম্প ছত্রখান! পাকিস্তান সেই টেস্ট হেরেছিল ৭৯ রানে। পার্থে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে তিনি যথাক্রমে ২১ ও ১৪ রান করেন। সিডনিতে তৃতীয় টেস্টে দুই ইনিংসে যথাক্রমে ২৬ ও ২৩।
সেই সফরের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে চলতি সিরিজে এগিয়ে আসেন বাবর। বাবরের ফর্মে ফেরা ছাড়াও অন্যান্য কারণেও সিরিজটি গুরুত্বপূর্ণ। এই টেস্ট দিয়ে 2024-25 মৌসুম শুরু করেছিল পাকিস্তান। ৯টি টেস্ট আছে, ১৯৯৮-৯৯ সালের পর এই প্রথম পাকিস্তান এক মৌসুমে এতগুলো টেস্ট খেলবে। পাকিস্তানের পুরো মৌসুমে ভালো পারফর্ম করতে বাবরের ফর্মে ফেরা অপরিহার্য। আর বাংলাদেশ সিরিজে তা না হলে কবে!
বাবরের ব্যর্থতার পেছনে অধিনায়কত্ব, সমালোচনা—বিভিন্ন বিষয় রয়েছে বলে জানা যায়। সাবেকরাও তাকে একের পর এক উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেগুলোর কোনোটাই কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। দিনশেষে বাবরকে কাজটা করতে হয়!