টেস্ট রেকর্ড বইয়ের পাতায় রুটের নাম নেই
ডিসেম্বর ২০১২। নাগপুর টেস্টে ভারত ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ। ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় ২১ বছর বয়সী জো রুটের। তার চেহারা এতটাই শিশুসুলভ ছিল যে গ্রায়েম সোয়ান তাকে দলের মাসকটের সাথে তুলনা করেছিলেন। চেহারা শিশুসুলভ, ব্যাটিং নয়। অভিষেক ইনিংসে ৬ নম্বরে নেমে ২২৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। সেই থেকে শুরু।
এক যুগ পরে, রুটকে এখন ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যান বলা হচ্ছে। যেন কেউ বলেনি, সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন নিজেই গতকাল বলেছেন। প্রতিভা দেখে এত বড় কথা বলেননি, রেকর্ড দেখে বলেছেন। এখন আপনি যদি ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট ব্যাটিংয়ের রেকর্ড বই দেখেন, সেই বইয়ে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে রুটের নাম।
গতকাল লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেন রুট। টেস্টে ইংল্যান্ডের এখন সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি রয়েছে – ৩৪টি। লর্ডসে রুটের সর্বোচ্চ রান – ২০২২ এই মাঠেও তার সর্বোচ্চ ৭টি সেঞ্চুরি রয়েছে। যুগের দীর্ঘ টেস্ট ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন রুট। লর্ডসে টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন মাত্র তিনজন; ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জ হেডলি এবং ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচ এবং মাইকেল ভন।
ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ডও রুটের দখলে এখন সময়ের ব্যাপার। তিনি অ্যালিস্টার কুকের (১২৪৭২) থেকে মাত্র 96 রান পিছিয়ে রয়েছেন। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের টেস্টে কুককে ছেড়ে দিতে পারেন রুট। কুক বাদে, রুটের চেয়ে টেস্টে বেশি রান রয়েছে ৫ জন খেলোয়াড়ের। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (৫৮.৭২) রুটের স্ট্রাইক রেট (৫৬.৯৮) থেকে ভালো।
ছুটছেন জো রুট
রুটের চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে পাঁচজনের। তাদের মধ্যে শচীন টেন্ডুলকারই একমাত্র নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। টেস্টে এই কিংবদন্তীর সেঞ্চুরির সংখ্যা ৫১, যা সর্বোচ্চ। ৪৫ সেঞ্চুরি করে দ্বিতীয় স্থানে আছেন কিংবদন্তি অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। পন্টিংয়ের সেঞ্চুরি ৪১। অর্থাৎ ক্যালিসকে স্পর্শ করতে রুটের প্রয়োজন ১১ এবং পন্টিংকে স্পর্শ করতে ৭। ৩৬ সেঞ্চুরি সহ রাহুল দ্রাবিড় এবং ৩৮ সেঞ্চুরি সহ কুমার সাঙ্গাকারার দূরত্ব মাপা উচিত নয়। তাদের ছুঁয়ে যাওয়া রুটটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
৩৩ বছর বয়সী রুটের জন্য ৭ বা ১১ সেঞ্চুরি করা নিঃসন্দেহে কঠিন। কিন্তু রুট ফর্ম খুব কঠিন যা সহজ হয়ে যায়। ২০২১ সাল থেকে রুট টেস্টে সেঞ্চুরি করাকে শিশুদের খেলায় পরিণত করেছেন। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এই সংস্করণে তিনি ১7টি সেঞ্চুরি করেছেন। রুট এই সময়ে আরও তিনজন ফ্যাব ফোর ব্যাটসম্যানকে ছাড়িয়ে গেছেন — বিরাট কোহলি, স্টিভ স্মিথ এবং কেন উইলিয়ামসন —।
১ জানুয়ারী ২০২১ পর্যন্ত, রুটের ১৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল, যেখানে উইলিয়ামসনের ছিল ২৩টি, স্মিথের ২৬টি এবং কোহলির ২৭টি। উইলিয়ামসন এবং স্মিথের এখন ফ্যাব ফোর-৩২-এর দ্বিতীয় সর্বাধিক সেঞ্চুরি রয়েছে। তিনি কোহলির চেয়ে ১০ সেঞ্চুরি পিছিয়ে ছিলেন, এখন ৫। শতাব্দী এগিয়ে।
রুট এবং রেকর্ডের প্রশংসা আপনাকে কিছুটা বিরক্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে একটা তথ্য দেওয়া যেতে পারে। টেস্ট রেকর্ড বইয়ের এক পৃষ্ঠায় নেই রুটের নাম। ৩৪টি টেস্ট সেঞ্চুরির একটি রুটও অস্ট্রেলিয়ার মাঠে করতে পারেনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা। সেটিও খেলেছেন ২৭টি ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে রুটের গড় ৩৫.৬৮ এবং ২৭ ইনিংসে ৯টি অর্ধশতক।
এমন নয় যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রুটের সেঞ্চুরি নেই। তাদের বিপক্ষে রুটের সেঞ্চুরি ৪টি। ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি- ১০টির মধ্যে ৩টি ভারতের মাটিতে। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ—এই তিনটি দেশের টেস্ট ব্যাটিং গড় ৫০-এর বেশি। ভারতেও কম নয়—৪৫.৪২। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই পথটি গড়। বদনাম থেকে রেহাই পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। পরের অ্যাশেজ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। না হলে আর কবে!