ক্রিকেট, গতিকে ধুয়ে মুছে স্বপ্নে বেঁচে আছে বাংলাদেশ
‘মোমেন্টাম’ আজকাল ক্রিকেটে খুব সাধারণ শব্দ হয়ে উঠেছে। কোচ – ক্রিকেটাররা প্রায়শই ম্যাচের অবস্থা বোঝাতে এই ইংরেজি শব্দটি ব্যবহার করে। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে, ১২ রানে এগিয়ে, দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান দ্রুত ২ উইকেট নেওয়ার পরে গতি বাংলাদেশের নাগালের মধ্যে এসেছিল। পরপর দুই ওভারে ‘নাইটওয়াচম্যান’ হিসেবে নামা আবদুল্লাহ শফিক ও খুররম শেহজাদকে ফিরিয়ে দেন হাসান মাহমুদ।
আজ সকালেও আগের দিনের ছন্দ ধরে রেখেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। আগের দিন ২ উইকেট নেওয়া হাসান আজ আরও ৩ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন। ফাস্ট বোলিংয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন নাহিদ রানা। অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদের ১ উইকেটে পাকিস্তান ১৭২ রানে গুটিয়ে যায়, বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৮৫ রান।
চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান করে, কারণ দিনের খেলা অন্ধকার আলোয় শেষ হয়। আগামীকাল পঞ্চম দিনে জিততে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান। দেখা যাচ্ছে, প্রথম টেস্টে ঐতিহাসিক ১০ উইকেটের জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে জয়ের সম্ভাবনা জাগানো বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানকে বিপর্যস্ত করার স্বপ্ন দেখছে।
আজ সকালে পাকিস্তানের প্রথম উইকেট শিকারি তাসকিন। ওপেনার সাইম আইয়ুব ও শান মাসুদ জুটি বাড়ানোর চেষ্টা করলেও ১৩তম ওভারে কভারে অধিনায়ক নাজমুল হাসানের হাতে ধরা পড়েন সাইম। ৩৫ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ২০ রান করেন সিমে। চতুর্থ উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। ১৭ তম ওভারে, শান মাসুদ তার প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই কাটা পড়েন। রানার অফ স্টাম্পের বাইরে কাটা শট খেলতে গিয়ে লিটন দাসের হাতে গ্লাভস পড়েন পাকিস্তান অধিনায়ক। তার ২৮ রানে আসে ৩৪ রান।
সেখানেই থেমে থাকেননি নাহিদ। পেস বোলিং পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের অস্বস্তি বাড়িয়ে চলেছে। প্রতিপক্ষ দলের সেরা ব্যাটসম্যান বাবর আজমের উইকেটটি উপহার হিসেবে পান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে লেংথ থেকে লাফানো বলে ব্যাট স্পর্শ করার পর প্রথম স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ধরা পড়েন বাবর। ১৮ বলে ১১ রান করে বাবর আউট হলে পাকিস্তান মারাত্মক বিপদে পড়ে যায়। ১৮.১ ওভারে, পাকিস্তান ৫ উইকেটে ৬৫ রান সংগ্রহ করে, ৭৭ রানে এগিয়ে।
পরের বলে উইকেটের সংখ্যা হতে পারত ৬টি। একই ওভারের পরের বলেই সদ্য ক্রিজে আসা মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ছেড়ে দেন সাদমান। তৃতীয় শিকারকে অবশ্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। পরের ওভারে রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে রানা কাট বিহাইন্ডের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি সৌদ শাকিল। গতি হারানোর পর শাকিলের ইনিংস থেমে যায় ২৩ রানে। রিজওয়ান পাকিস্তানের হয়ে লড়াই করেছিলেন যারা ৮১ রানে ৬উইকেট হারিয়েছিল। তার সঙ্গে ছিলেন সালমান আলী আগা। রানার বাউন্সারের মাথায় আঘাত পেয়েও টানা তিন ওভারে ৩ উইকেট নেওয়া রিজওয়ান সালমানের সঙ্গে ৫৫ রান যোগ করেন।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই জুটি ভাঙেন হাসান। নতুন স্পেলের প্রথম ওভারেই দারুণ সেটে ভুল শটে রিজওয়ানকে ফাঁদে ফেলেন তিনি। অফ-স্টাম্পের বাইরে মিশ্র আউট-সুইং বল চালাতে গিয়ে প্রথম স্লিপে নাজমুলের হাতে ধরা পড়ার আগে ৭৩ বলে ৪৩ রানে থেমে যায় রিজওয়ানের ইনিংস। পরের বলেই মোহাম্মদ আলীকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান ২৪ বছর বয়সী এই পেসার। হাসানের চতুর্থ শিকার ছিলেন আলী, যিনি অফ-স্টাম্পের বাইরে বল পাঞ্চ করেছিলেন এবং স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন।
৪২তম ওভারে আরেক পেসার রানা নতুন স্পেলে বিরতি আনেন। তিনি আবরার আহমেদকে বাউন্সার দিয়ে ঝাঁকান এবং স্লিপে থাকা নাজমুলকে হাতকড়া পরিয়ে দেন। হাসানের মতো নাহিদেরও ছিল ৪ উইকেট। বল আউট হতে পাকিস্তানের দরকার ১ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নেওয়ার মধুর প্রতিযোগিতা ছিল দুই পেসারের মধ্যে। সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন হাসান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মীর হামজাহকে পেছনে ফেলে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নেন তিনি। পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশি পেসারের এটিই প্রথম ৫ উইকেট। তিনি ৪৩ রানে মাত্র ৫ উইকেট, নাহিদের শিকার ৪৪ রানে 4 উইকেট। আরেক পেসার তাসকিন নেন ১ উইকেট। টেস্টে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে ১০ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। পাকিস্তান ১৭২ রানে গুটিয়ে যায়।
ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য ১৮৫ রান। জবাবে বাংলাদেশ দলের দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম চতুর্থ ইনিংসে যা করলেন, তা আর ভালো হতে পারত না। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন জাকির, সাবধানে খেলেছেন সাদমান। আলোতে খেলা শেষ হওয়ার আগে জাকির মাত্র ২৩ বলে ৩১ রান করেন, সাদমানের ৯ রান আসে ১৯ বলে। দুজনের সৌজন্যে ৭ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪২ রান করে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৪৩ রান, হাতে ১০ উইকেট। একমাত্র রাওয়ালপিন্ডির আবহাওয়াই পারে পাকিস্তানকে এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান: ২৭৪ ও ৪৬.৪ ওভারে ১৭২ (সালমান ৪৭*, রিজওয়ান ৪৩, শান ২৮, সাইম ২০; হাসান ৫/৪৩, রানা ৪/৪৪, তাসকিন ১/৪০)।
বাংলাদেশ: ২৬২ ও ৭ ওভারে ৪২/০ (জাকির ৩১*, সাদমান ৯*)।
(৪র্থ দিন শেষে)