কোটা আন্দোলন: এ পর্যন্ত যা হয়েছে
দ্বিতীয় দফা লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। এই অহিংস আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস রূপ নেয়। এ পর্যন্ত ১৮৭ জন নিহত হয়েছে।
কোটা পদ্ধতি নিয়ে এই আন্দোলন ছিল দ্বিতীয় দফা আন্দোলন। 2018 সালের জানুয়ারি থেকে মূল আন্দোলন শুরু হয়। বিষয়টি আদালতে পৌঁছালে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায়। পরে আদালতের রায়ের পর গত জুন থেকে দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে হিংস্র রূপ নেয়। এ অবস্থায় গত ১৭ জুলাই সরকার সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে বন্ধ রয়েছে অনলাইন মিডিয়া। আন্দোলনের শুরু থেকে যা কিছু ঘটেছে তার সবই পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
আন্দোলনের প্রথম পর্ব: 2018
31.1.2018
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্মূল্যায়ন চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ও দুই সাংবাদিকের পক্ষে রিট করা হয়েছে। রিট দায়ের করে আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন বলেন, ১৯৭২ সালে একটি নির্বাহী আদেশে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে সরকারি, বেসরকারি, প্রতিরক্ষা, আধা-সরকারি ও জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং ১০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত নারী কোটা চালু করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে কোটা সংস্কার ও পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে। ফলে যারা কোনো কোটায় পড়েন না, বাকি ৪৪ শতাংশের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়।
ফেব্রুয়ারী 17, 2018
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংস্কারের পক্ষে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে দুই দল। কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে কয়েকশ চাকরিপ্রার্থী বিক্ষোভ করেছে। আর সংস্কার প্রস্তাবের নামে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইছান কমান্ডের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু পুলিশ সেখানে কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি।
আন্দোলন অব্যাহত রাখতে সন্ধ্যায় ৭১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
9 এপ্রিল, 2018
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।৪ মার্চ মানববন্ধন কর্মসূচির পর আন্দোলনকারীরা সরকারকে দায়সারা ঘোষণা দেন। কোটা সংস্কারের সময়সীমা ১৩ মার্চ। আন্দোলনকারীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া, কোটায় বিশেষ কোনো নিয়োগ পরীক্ষা না নেওয়া, একই ধরনের নিয়োগের ব্যবস্থা করা। সরকারি চাকরি এবং চাকরির নিয়োগে সকলের বয়সসীমা। পরীক্ষায় একবারের বেশি কোটা-সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না।
এদিন কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে দুপুর দুইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে এসে পৌঁছায়। . জাতীয় পরিষদের অধিবেশন থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে হঠাৎ শিশুপার্কের দিক থেকে দাঙ্গা পুলিশের ১৫-২০ প্লাটুন কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে শুরু করে শাহবাগ মোড়ের দিকে। তারা আন্দোলনকারীদের মারধর শুরু করে। পুলিশের অতর্কিত হামলায় আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এরপর থেকে আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা শুরু হয়। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদের নেতাদের ওপর বারবার হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনের একপর্যায়ে ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। আর ৪ অক্টোবর সরকার একটি পরিপত্র জারি করে। এরপর ২০২১ সালে মুক্তিযোদ্ধার কিছু সন্তান এই পরিপত্র বাতিল চেয়ে রিট করেন। . রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। আইনি কর্তৃত্ব ছাড়া কেন সার্কুলার ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
৯ জুলাই, মঙ্গলবার
হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে দুই শিক্ষার্থীর আবেদন। পরদিন শুনানি হবে। তবে ওই দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন। আন্দোলনকারীরা পরদিন সারাদেশে ‘বাংলা অবরোধ’ নামে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
10 জুলাই, বুধবার
সরকারি চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটার বিষয়ে চার সপ্তাহ স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমরা এই সমাজের মানুষ, আমাদের কিছু বলার আছে। এটি হাইকোর্টে দেওয়া রায়। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। সেখানে তারা যা করেছে তা প্রশংসার যোগ্য নয়। মনে হচ্ছে তারা
শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আমরা এই সমাজের মানুষ, আমাদের কিছু বলার আছে। এটি হাইকোর্টে দেওয়া রায়। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। সেখানে তারা যা করেছে তা প্রশংসার যোগ্য নয়। মনে হচ্ছে তারা ভুল বুঝেছে। তারা যাই করুক না কেন তারা আমাদের ছেলে মেয়ে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘আমি প্রথম দিনেই বলেছিলাম, রাজপথে স্লোগান দিয়ে রায় বদলায় না। এটা আজকের নয়, আমি যখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ছিলাম, তখন একটা মামলায় বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করা যাবে না। এটা সঠিক পদক্ষেপ নয়।’
অন্যদিকে সব সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। তারা মনে করেন, এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
11 জুলাই, বৃহস্পতিবার
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। এটি অনিচ্ছাকৃত এবং সম্পূর্ণ বেআইনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, শিক্ষার্থীরা ‘সীমা অতিক্রম করছে’।
এদিন পুলিশের বাধার মুখে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা।
12 জুলাই, শুক্রবার
কোটা সংস্কারের দাবিতে শুক্রবার ছুটির দিনেও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। রেল অবরোধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
13 জুলাই, শনিবার
সব গ্রেডে কোটা যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পরদিন বিক্ষোভকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে রাষ্ট্রপতির কাছে এই স্মারকলিপি পেশ করবেন।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, বিচারাধীন বিষয়টি নিয়ে সরকারের কিছু করার নেই।
14 জুলাই, রবিবার
গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে আমার কিছু করার নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিরা চাকরি পাবে না, রাজাকারের নাতি-নাতনিরাও কি চাকরি পাবে?
২০১৮ সালের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় তিনি বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল কোটা বাতিল হলে কী হয় তা দেখা। তখন নারীরা বিসিএস থেকে বাদ পড়ায় ২৩টি জেলার কেউই পুলিশে চাকরি পাননি।
একই দিন পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন আহ্বান করে এবং সরকারি চাকরির সব গ্রেডের কোটা যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়।
পরে মধ্যরাতে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অপমান দাবি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও মিছিল হয়েছে।
রাত ১০টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলে বিক্ষোভ করার পর মধ্যরাতে টিএসসির রাজু ভাস্করে শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘আমি অধিকার চাই, রাজাকার হলাম’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
15 জুলাই, সোমবার
দুপুর ২টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের স্লোগানের জবাব দেবে ছাত্রলীগ বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আন্দোলন থেকে আত্মস্বীকৃত ঔদ্ধত্য ও অহংকারী মানসিকতা বা আচরণ প্রকাশ পেয়েছে। এর জবাব দিতে প্রস্তুত ছাত্রলীগ।
পরে বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যারা ‘আমি রাজাকা’ স্লোগান দিচ্ছেন, তাদের বরখাস্ত করা হবে।
বেলা তিনটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আন্দোলনকারীদের মারধর করা হয়। শুটিংও দেখা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হয়েছে। আহত ২৯৭ জনকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ উভয় পক্ষের সমাবেশের ঘোষণা।
16 জুলাই, মঙ্গলবার
দিনভর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সরকার সমর্থকরা। এতে ছয়জন নিহত হয়। রংপুরে আন্দোলনরত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের বুলেটে নিহতের গ্রাফিক ছবি।
বিকেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আন্দোলন যাবে, আন্দোলন আসবে। তবে ছাত্রলীগ থাকবেই। সবকিছু মনে রাখা হবে এবং উত্তর দেওয়া হবে। একটি ঘটনারও উত্তর পাওয়া যাবে না। আমরা যদি রাজাকারদের ফাঁদে পড়ে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনকে বিভিন্ন খাতে মোড় নেওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে আমরা ভবিষ্যতে দেখব কত ধান দিয়ে কত ধান হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নতুন কর্মসূচি। নিহতদের স্মরণে বুধবার তারা জানাজা ও কফিন শোভাযাত্রা করবেন।
17 জুলাই, বুধবার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়।
এমনকি ছুটির দিনেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, জানাজা, কফিন মিছিল এবং মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল থমকে যায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হল বন্ধ ঘোষণা ও পুলিশি অ্যাকশনের পর সন্ধ্যার মধ্যেই অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে অনেক শিক্ষার্থী রাতেও হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ। ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।
প্রায় আট মিনিটের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিশ্বাস, আমাদের শিক্ষার্থীরা উচ্চ আদালত থেকে ন্যায়বিচার পাবে, তাদের হতাশ হওয়া উচিত নয়।
18 জুলাই, বৃহস্পতিবার
দেশব্যাপী বিক্ষোভ, সহিংসতা, সংঘর্ষ ও গুলি। মোট 27 জন নিহত হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারাদেশ প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, পুলিশি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫০০ জন। কোথাও কোথাও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ, কোথাও কোথাও সরকার সমর্থক বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
‘পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সোয়াটের নৃশংস হামলার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, হত্যার প্রতিবাদ, হত্যাকারীদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণ এবং কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দলে দলে রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষের এসব ঘটনা ঘটে। .
সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন।
19 জুলাই, শুক্রবার
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘সম্পূর্ণ হরতাল’ বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল, পরিস্থিতি থমকে গেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
ওই দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষে অন্তত ৪৪ জন নিহত হন। আর সারাদেশে নিহতের সংখ্যা ৫৬। ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিক, পথচারীসহ কয়েক শতাধিক আহত হয়েছেন। শুরু থেকেই এই আন্দোলনে শুধু ছাত্ররাই ছিল। তবে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় লোকজনকেও অংশ নিতে দেখা গেছে।
৯ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত ‘হরতাল’ চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মোট অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে গত তিন দিনে সারাদেশে ১০৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন এবং শুক্রবার ৫৬ জন নিহত হয়েছেন।
রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি, সেনা মোতায়েন করা হয়। ইন্টারনেট পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ।
20 জুলাই, শনিবার
দেশজুড়ে কারফিউ, সেনা মোতায়েন। সাধারণ ছুটি ঘোষণা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য স্থান হল যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, বাড্ডা ও মিরপুর। এ ছাড়া মোহাম্মদপুরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সংঘর্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। চার দিনে মোট ১৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন, শুক্রবার ৭৫ জন এবং শনিবার ২৬ জন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে অপসারণের অভিযোগ উঠেছে।
আন্দোলনের তিন সমন্বয়কারী তিন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবি তুলে ধরেন।
কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবার তিনটি সরকারি ভবনে ১১৩টি গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
জুলাই 21, রবিবার
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পুনর্বহালের বিষয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সম্পূর্ণ বাতিল (বাতিল ও বাতিল) করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। রায়ে বলা হয়, ৯৩ শতাংশ কোটা পদ্ধতি হিসেবে মেধার ভিত্তিতে; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীর সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; সংখ্যালঘুদের জন্য 1 শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের জন্য 1 শতাংশ। তবে নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সাধারণ মেধা তালিকা থেকে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। এ নির্দেশনার আলোকে আপিল বিভাগ অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য সরকারের নির্বাহী বিভাগকে নির্দেশ দেন।
প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, এসব নির্দেশনা ও আদেশ সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজনে এবং সার্বিক বিবেচনায় নির্ধারিত কোটা বাতিল, পরিবর্তন বা সংস্কার করতে পারে।
এদিকে পাঁচ দিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৪ হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজন মারা যাওয়া এবং এর আগে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন, শুক্রবার ৭৫ জন, শনিবার ২৬ জন এবং রবিবার ১৯ জন নিহত হয়েছেন।
আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি।
চার দফা দাবি পূরণে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ চালু করা, শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হল খোলা, আন্দোলন সমন্বয়কারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কারফিউ তুলে নেওয়া। এ বিষয়ে চার সমন্বয়কারী সংবাদ সম্মেলন করেন।
একই দিনে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৬ জন সমন্বয়কের যৌথ বিবৃতি’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা পাঠানো হয় মবিলে।
22 জুলাই, সোমবার
কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রণীত প্রজ্ঞাপনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সংঘর্ষে আরও ১৩ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার পাঁচজনের মৃত্যু হয়। গত শনিবার নারায়ণগঞ্জে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে সোমবার। আর সোমবার জানা গেছে, গত শুক্রবার রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল) থেকে চারটি মরদেহ নেওয়া হয়। এ ছাড়া আজ এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মোট, ছয় দিনে 187 জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার ৬ জন, বৃহস্পতিবার ৪১ জন, শুক্রবার ৭৯ জন, শনিবার ৩৬ জন, রবিবার ২০ জন এবং সোমবার ৫ জন নিহত হয়েছেন।
23 জুলাই, মঙ্গলবার
কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি।