ভেঙে পড়েছে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা
আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ বন্ধ, অধিকাংশ শিল্প-কারখানা বন্ধ। চাহিদা এখন মেটানো হচ্ছে মূলত মজুদকৃত পণ্য দিয়ে।
তিন দিনের কারফিউ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সমুদ্র ও স্থলবন্দরে আমদানি করা নিত্যপণ্যের চালান বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে হামলার আশঙ্কায় অধিকাংশ চালক পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে সড়কে যান না। সব মিলিয়ে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বড় সংকটে পড়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারফিউ থাকায় চাহিদা তুলনামূলক কমেছে। কিন্তু এই কম চাহিদা অনুযায়ীও নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে না। মূলত বর্তমান চাহিদা আগের মজুত পণ্য দিয়েই মেটানো হচ্ছে। সরবরাহ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে নিত্যপণ্যের সরবরাহ সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্য সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমদানি-রফতানিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। কারণ, বন্দরে পণ্যের শুল্ক করা যায় না। আর কারফিউর পর অধিকাংশ শিল্প-কারখানা বন্ধ। কয়েকটি কারখানা সীমিত পরিমাণে খাদ্যপণ্য উৎপাদন করলেও সরবরাহ করতে পারছে না।
দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার টন তেল, চিনি, ডাল ও আটা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। তবে গত কয়েক দিনে তারা স্বাভাবিক সময়ে মাত্র ২০ শতাংশ পণ্য ডেলিভারি করতে পেরেছে। সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা সোমবার প্রথম আলো</em>কে বলেন, কারফিউ থাকায় আমাদের কারখানা বন্ধ রয়েছে। শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আমরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিতে পারছি না।
পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ভোগ্যপণ্যের একটি প্রধান পাইকারি কেন্দ্র। এ বাজার থেকে ভোজ্যতেল, চিনি, ময়দা ও মসলার মতো পণ্য সংগ্রহ করেন রাজধানী ও আশপাশের এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মৌলভীবাজার বন্ধ। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা প্রথম আলো</em>কে বলেন, কারফিউ থাকায় কোনো পণ্য আসছে না। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।
চালের বাজারেও সরবরাহ কমছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুরান ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজারের গুদামে এক হাজার টনের বেশি চাল আসে। তবে গত তিন দিনে কোনো চাল আসেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় চাল বিক্রিতে কোনো সমস্যা নেই বলে জানান তারা।
কোনো পণ্য আসছে না। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা আরও বাড়বে।
গোলাম মাওলা, সাধারণ সম্পাদক, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি
কুষ্টিয়ার খাজানগরে ৫৪টি অটো রাইস মিল ও ৩৫০টি হাস্কিং মিল রয়েছে। কারফিউর কারণে গত কয়েকদিনে চাল মিলের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে পরিবহন সমস্যার কারণে চালের সরবরাহও কমে গেছে। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান গতকাল প্রথম আলো</em>কে বলেন, ট্রাক চালকরা ভয় পান। এ কারণে চাল আমদানি ও চালের চালান উভয়ই কমেছে। তিনি বলেন, যে পরিমাণ চাল প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে তার ১০ শতাংশও সরবরাহ করা হচ্ছে না।
এদিকে মুরগির খামারিরা সংকটে পড়েছেন। ডিম ও মাংস উৎপাদন হলেও তা বাজারে পাঠাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সরবরাহ কমে যাওয়ায় অঞ্চলভেদে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১৬০ টাকায়। ঢাকার তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হামিদ মিয়া বলেন, বর্তমানে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহে ভাল্লুক থেকে ডিম আসছে, কিন্তু চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসছে না।
খামারে মুরগি পালন করা হলেও বাজারে নিতে সমস্যা হচ্ছে। অনেকে মাইকিং করে প্রতি কেজি মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও ঢাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলো</em>কে বলেন, ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই ঢাকায় মুরগি ও ডিম আনছেন না। আর যারা ঝুঁকি নিয়ে আসছেন, তারা বেশি দাম নিচ্ছেন।
পরিবহন সংকট
বাংলাদেশ ট্রাক চালক ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মোঃ মনির প্রথম আলো</em>কে বলেন, ঢাকার তেজগাঁওয়ে সাধারণত প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৩০০ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে চার হাজারের বেশি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। ভাংচুরের ভয়ে গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে কোনো ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান তেজগাঁও ছেড়ে যায়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গতকাল জানিয়েছে যে তারা কাস্টম হাউসগুলিকে সনাতন পদ্ধতিতে আমদানি করা পচনশীল পণ্য, খাদ্য পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলো</em>কে বলেন, পচনশীল কৃষিপণ্য যদি এন.