সাইমন তার মাকে আর দেখতে পায়নি
চার দিন আগে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে নিহত সাইমনের মরদেহ গত রোববার সন্ধ্যায় সন্দ্বীপে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়। তবে মা রহিমা বেগমের চিৎকার এখনো থামেনি। সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নে শিকদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মূল বাড়ির পাশের পুকুরের পাশে সাইমনের জরাজীর্ণ বাড়ির ভেতর থেকে রহিমার হাহাকার ভেসে আসছে। গরীব রহিমার পুরানো চালের টিনগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে পানি যাতে না পড়ে। সেটি দেখিয়ে রহিমা বেগম বলেন, দেড় মাস আগে এই ট্রিপল কিনতে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন সাইমন।
রহিমা বেগমের ঘরের আসবাবপত্র ভাঙা কাঠের খাঁজ। নিচ থেকে ধাক্কা দিয়ে এটিকে কোনোভাবে সোজা করে রাখা হয়। সাইমনের মা রহিমা বেগম ও খালা নাঈমা বাড়ির অন্য ঘরে কথা বলছিলেন। সেখানে একে একে তাকে সান্ত্বনা দিতে আসছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। সাইমনের কাছে জানতে চাইলে রহিমা আক্ষেপ করে বলেন, বৃহস্পতিবার আমার ছেলে বলেছিল সে আমার বোনের বাসায় আমাকে দেখতে আসবে, কিন্তু সে আসেনি। মারে আর কখনো সাইমনকে দেখেনি।’
আরো খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন
গত ১৮ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট থেকে নিখোঁজ হন সাইমন। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। টানা তিন দিন খালা নাঈমা বেগম বহদ্দারহাট ও মুরাদপুরের বিভিন্ন স্থানে সাইমনের খোঁজ করেন। তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর ২০ জুলাই শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে সাইমনের লাশ শনাক্ত করেন নাঈমা। তিনি ভিউ ইটিসি বলেন, সাইমনের বন্দর এলাকার ফকিরহাটে আমার বাড়িতে এসে মায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। বৃহস্পতিবার।” রাত একটার দিকে তার আসার কথা ছিল, কিন্তু ছেলে আটটায় না এলে আমি ও আমার স্বামী তার খোঁজে বহদ্দারহাটে যাই। পুরো এলাকা ছিল রণক্ষেত্র। সেখানে তাকে পেলাম না। পরের দিন শুক্রবার আমি তার খোঁজে সর্বত্র যাই। শনিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে তার লাশ পাওয়া যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে নাইমা বলেন, ‘আমার বোনের ছেলে ছোটবেলা থেকেই মানুষের দোকানে কাজ করে। মা ও ভাইকে ভাত দিলেন। এই ছেলে কখনো রাজনীতি বোঝার চেষ্টা করেনি। দেড় বছর ধরে বহদ্দারহাটের একটি মুদি দোকানে কাজ করছিলেন তিনি। আমরা দোকান মালিকের বাড়িতে থাকি। মালিকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে সে আমার বাড়ির দিকে রওনা দিল। পথেই তার মৃত্যু হয়।
পিসিএসএস
সাইমনের বাবা আমিন রসুল 2012 সালে দুই ছেলে তুশিন, সাইমন ও স্ত্রী রহিমাকে রেখে মারা যান। রহিমা জানান, বাবার মৃত্যুর সময় সাইমনের বয়স ছিল দুই বছর। দুই ছেলের মধ্যে সাইমন ছোট। বড় ছেলে তুশিন জন্ম থেকেই কিছুটা নিষ্পাপ। পরিবারের জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে একটি মুদি দোকানে চাকরি নেন সাইমন। বিলাপ করতে গিয়ে রহিমা বেগম বলেন, ছেলে সাইমনই তার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। তিনি তার মাকে দেখতে আসতে চেয়েছিলেন। পথেই মৃত্যু হয়। রহিমা বলেন, “আমি জানি না আমি আমার জীবন বাঁচাবো এবং কি জন্য হত্যা করবো, আমি জানি না কি উদ্দেশ্যে বাঁচাবো।”
এবারের কোরবানির ঈদে বাড়িতে আসতে পারেননি ছেলে। এতে রহিমার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। ছেলেকে দেখার জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। রহিমা বলেন, ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য তার মন ছুটছে। কয়েকদিন আগে পিঠাপুলি নিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। সে তার বোনের বাসায় গেল। সেখানেই সাইমন বেড়াতে আসে। বৃহস্পতিবার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি মৃত রয়ে গেলেন।