অসুস্থ শরীরের জন্য ওষুধ কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সাব্বির
বাবা আমাদ আলী বৃদ্ধ, আর কাজ করতে পারেন না। পরিবারের বড় ছেলে সাব্বির হোসেন তাই সংসার চালাতে টাকা রোজগারের আশায় ঢাকায় যান। তিনিও একটি ছোট কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বেতনের টাকা বাবার কাছে পাঠাতেন। বাবা অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে ছেলের আয়ের সঙ্গে যোগ করে সংসার চালাতেন। গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ওষুধ কিনতে বের হওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ওই কিশোর।
সাব্বির হোসেনের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। মৃত্যুর পরের দিন ১৯ জুলাই তার লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে তার স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
আমোদ আলী ও রাশিদা খাতুনের তিন সন্তানের মধ্যে সাব্বির সবার বড়। সাব্বিরের সুমাইয়া খাতুন (১৭) ও সাদিক হোসেন (১২) নামে দুই ছোট ভাই আছে। বাবা আমোদ আলীর নিজস্ব কোনো কৃষিজমি নেই। অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালান।
আমোদ আলী বলেন, তার ছেলে কোনো রাজনীতি করেনি। বেঁচে থাকার তাগিদে টাকা রোজগার করতে ঢাকায় চলে যান। সেখানেও কোনো মিছিল-মিটিংয়ে যাননি সাব্বির। জ্বরের কারণে অসুস্থ শরীরের ওষুধ কিনতে বের হন। কেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হলো? তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার চান।
তার চাচাতো ভাই তন্ময় আহমেদ জানান, সাব্বির দরিদ্র পরিবারে ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না, তাই কাজের সন্ধানে ঢাকায় চলে আসেন। তিনি জানান, সাব্বির মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। পাঁচ-ছয় মাস ঢাকার একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন। পরে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সেখানে সামান্য বেতন পেতেন। এই টাকা তিনি বাড়িতে পাঠাতেন।
সাব্বিরের চাচাতো ভাই শামীম হোসেন জানান, তিনি ঢাকায় থাকেন। সাব্বির প্রথমে উত্তরা এলাকায় তার দোকানে কাজ করেন। মাসখানেক আগে একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন-সংঘাতের মধ্যে ওষুধ কিনতে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন সাব্বি। তার শরীরে জ্বর ছিল। তাই বাইরের অবস্থা খারাপ হলেও ওষুধের জন্য বাইরে যেতে হয়েছে। আর তাতেই তার জীবনের শেষ। সেখানে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।