প্ভিউ ইটিসি  | বাংলা নিউজ পেপার
শুক্রবার , ২৬ জুলাই ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আন্দোলন
  4. আরব নিউজ
  5. ইসলাম
  6. ক্রিকেট
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জয়পুরহাট
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. পরামর্শ
  14. প্রবাস
  15. ফুটবল

আহতদের উত্তরার সাতটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

প্রতিবেদক
ভিউ ইটিসি
জুলাই ২৬, ২০২৪ ২:২০ অপরাহ্ণ
আহতদের উত্তরার সাতটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

আহতদের উত্তরার সাতটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে

উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের বাম পায়ে ও পায়ুপথে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ১৮ জুলাইয়ের ঘটনা। ওইদিন বিকেলে উত্তরার আজমপুরের রবীন্দ্রসরণিতে ওই স্কুলসহ আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেয়। এরপর আরও অনেকের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হন এই ছাত্রও।

গত মঙ্গলবার কথা হয় ওই ছাত্রীর সঙ্গে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ছিলেন, বসতে বা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না। তার বড় ভাই তাকে খাওয়াচ্ছিলেন।

এত ডাক্তার আর নার্স কোথায় পাব? যারা এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাদের কেউই। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

মেজর (অব.) মোঃ হাফিজুল ইসলাম, উপ-পরিচালক, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

গুলিবিদ্ধ হয়ে সড়কে পড়ে যান বলে ওই শিক্ষার্থী জানান। তাকেসহ আরো অনেক আহত শিক্ষার্থীকে নিকটবর্তী উত্তরা ক্রিসেন্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার মতে, সেদিন যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল তারা সবাই ছাত্র। সেদিন যারা আহত বা নিহত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল তারা সবাই কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র।

ক্রিসেন্ট হাসপাতালের বেশ কয়েকটি ভবন একই রাস্তায় রয়েছে যেখানে 18 জুলাই এবং তার পরের দিন বিক্ষোভ এবং গুলি হয়েছিল। গত বুধবার নাজমুল ইসলামের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয় বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) কমান্ডার (অব.) মো. তিনি জানান, ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনে তারা প্রায় ১০০ জন আহত রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। প্রথম দিনে যারা এসেছেন তারা প্রায় সবাই শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় দিনে যারা এসেছেন তাদের অনেককেই ছাত্র মনে হয়নি।

কমান্ডার (অব.) মোঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, দুই দিনে পাঁচজন মৃত ব্যক্তিকে এ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স প্রায় ৬০ বছর, সে পথচারী বা রিকশাচালক। একজনের বয়স প্রায় ৩০ বছর। বাকি তিনজনের বয়স 20-21 বছর। শেষ তিনজন সবাই ছাত্র।

গত মঙ্গলবার ও গত বুধবার উত্তরা এলাকার সাতটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে শুরু হওয়া দ্বন্দ্ব ও পরবর্তী সংঘর্ষের সময় হাসপাতালগুলোতে আহতদের বন্যা ছিল। সেখানে অন্তত ৮৬৭ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সেখানে 29টি মৃতদেহ ছিল। আহতদের চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আহতদের চিকিৎসার জন্য চাপের মুখে পড়তে হয় বলেও অভিযোগ করেছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক মেজর (অব.) মোঃ হাফিজুল ইসলাম নিজে একজন চিকিৎসক। সে সময়ের পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি ভিউ ইটিসিকে বলেন, রোগীরা ভিড় করছিল। আমরা এত লোক কোথায় রাখব? এত ডাক্তার আর নার্স কোথায় পাব? যারা এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন তাদের কেউই। তারপরও আমরা সেবা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।

উত্তরার আজমপুরে রবীন্দ্রসরণি ছেড়ে লেক ড্রাইভ রোড, সেক্টর ৭, উত্তরা একটু হাঁটার দূরত্ব। রাস্তার দুপাশে দুটি বহুতল ভবনে রয়েছে হাই-কেয়ার জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতালের তথ্য কর্মকর্তা রাসেল মিয়া জানান, ১৮ জুলাই দুপুরের পর ৩৫-৩৬ জন আহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে আসে। তাদের গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও ইটপাটকেল দিয়ে আহত করা হয়। তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দুই-তিনজন ছাত্রীও ছিল।

১৯৮৬ সাল থেকে উত্তরায় বসবাস করা একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভিউ ইটিসিকে বলেন, উত্তরা মূলত আবাসিক এলাকা। এই এলাকায় এমন সংঘর্ষ কল্পনার বাইরে।

লুবানা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার সেক্টর-১১ এর গরীব-ই-নওয়াজ এভিনিউয়ের শুরুতে। হাসপাতালটি মূলত হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য পরিচিত। আহত ব্যক্তিরাও এ হাসপাতালে আসেন।

হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আবদুল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল চারটা থেকে ছয়টার মধ্যে চারজন আহত হন। এ ছাড়া গুলিতে নিহত এক ব্যক্তি এসেছেন, যিনি একজন ছাত্র বলে মনে হচ্ছে। আরেকজন ‘ক্রিটিকাল’ রোগী ছিলেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি গেলেন কি না তা জানা নেই।

একই রাস্তায় তিনটি উচ্চ ভবনে শিন-শিন জাপান হাসপাতাল। হাসপাতালের মহাব্যবস্থাপক ভিউ ইটিসিকে বলেন, গত ১৮-১৯ জুলাই এই হাসপাতালে ২৫ জন রোগী আসেন। শরিফুল ইসলাম বলেন, যারা এসেছেন তারা সবাই ছাত্র। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন তারা। এ ছাড়া দুটি লাশ এসেছে। তারা মরদেহ দুটি ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়।

উত্তরা এলাকায় একটাই বড় সরকারি হাসপাতাল, নাম বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল। হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই এ হাসপাতালে ২৬৫ জন আহত হয়েছেন। আর আটজনের লাশ এসেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের বেসরকারি সৈয়দ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষক জানান, সংঘর্ষের প্রথম দুই দিনে ১৭৫ জন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে এসেছেন। তাদের অধিকাংশই ছিল ছাত্র। আর এলো দুটি লাশ। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয়নি

রাজধানীর রামপুরা এলাকায় দুই থেকে তিন দিন ধরে সংঘর্ষ চলে। আহত ও নিহতদের সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। সংঘর্ষের বিভিন্ন পর্যায়ে রামপুরার বাঁশরী এলাকার ফরাজী হাসপাতালে অনেক রোগী আসেন।

হাসপাতালের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রুবেল হোসেন ভিউ ইটিসিকে বলেন, ১৮ জুলাই ৩০০ জন আহত ও ৫টি লাশ এসেছে। 19 জুলাই, 600 জন আহত এবং 10টি মৃতদেহ আসে। 21 জুলাই 50 জন আহত ব্যক্তি এসেছিলেন। আহতদের প্রায় সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৫টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

উদ্বেগ বেসরকারি খাতে

সরকারি হাসপাতালের মতো বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক রোগী সামলাতে প্রস্তুত ছিল না। তাদের সীমিত জনবল, শয্যা ও ওষুধ রয়েছে। তারপরও তারা চিকিৎসা দিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই কিছু সমস্যা, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ-কুয়েত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল ও মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া বাকি ছয়টি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও ব্যবস্থাপনা সূত্র জানায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। চাপের কারণে আহতদের রাখা হচ্ছে।

হাসপাতালের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা রোগীর সেবা করব বা এসব সমস্যা মোকাবেলা করব।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নীতি বলছে, রোগীর স্বার্থ সবার আগে। নীতিমালা অনুযায়ী, রোগী ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনো পরিচয় নেই। জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক পরিচয় চিকিৎসায় বাধা হতে পারে না। আন্তর্জাতিক নিয়মনীতিও তাই। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান ভিউ ইটিসিকে বলেন, বিএমডিসির কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নেই। এটা দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের।

উত্তরার অধিকাংশ হাসপাতালে দেখা যায়, রোগীদের একটি বড় অংশ চিকিৎসা না করে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যায়। এই রোগীরা আশঙ্কা করেছিলেন যে তারা হাসপাতালে থাকলে তারা সমস্যায় পড়তে পারে। চিকিত্সা সম্পূর্ণ না করা অনেকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

হাসপাতালে রোগীদের চাপের সৃষ্টি ও চিকিৎসা না দেয়ায় ভীতির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি কেউ।

সর্বশেষ - ক্রিকেট