“আমার ছেলের অপরাধ কি, আমাকে নিঃসন্তান হতে হলো কেন?”
আমার ছেলের কি অপরাধ ছিল? কেন আমাকে নিঃসন্তান হতে হবে? আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। গত ১৮ জুলাই রাজধানী ঢাকার উত্তরায় মাথায় গুলিবিদ্ধ তরুণ মাহমুদুল হাসান ওরফে রিজভীরের (২০) মা ফরিদা ইয়াসমিন কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন।
মাহমুদুল হাসানের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চর কৈলাশ এলাকায়। তবে তার মরদেহ উপজেলার হারানী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর (বায়েরচর) গ্রামে অবস্থিত তার নানার বাড়িতে দাফন করা হয়।
শুক্রবার বিকেলে মোহাম্মদপুর গ্রামে কথা হয় ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি ভিউ ইটিসিকে বলেন, গত ১৮ জুলাই দুপুরে ছেলের সঙ্গে ফোনালাপ হয়। ছেলে বলল, মেসে মাছ আর তরকারি নেই। তিনদিন মেস থেকে বেরোতে পারছি না। অবস্থা বেগতিক দেখে সন্ধ্যায় নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হন। ফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পর ছেলের এক সহপাঠী ফোন করে জানায়, মাহমুদুল অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ফরিদা ইয়াসমিন আরও বলেন, ‘ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে ঢাকায় ছুটে আসি। গিয়ে দেখি আমার ছেলের লাশ। লাশ আনতে ঢাকা যাইনি। আমি আমার ছেলেকে সুস্থ করতে গিয়েছিলাম। এখন আমি আমার ছেলেকে ছাড়া বাঁচব কী করে?’
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিক্স বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে চলতি মাসেই ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন মাহমুদুল। ২রা জুলাই মা ফরিদা ইয়াসমিন তাকে মেসে নিয়ে আসেন। তিন সহপাঠীর সঙ্গে মেসে থাকতেন মাহমুদুল।
মাহমুদুলের বাবা মো. জামাল উদ্দিন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা। তিনি বলেন, মাহমুদুল কোনো ঝামেলায় জড়াননি। পড়ালেখার প্রতি তার ঝোঁক ছিল বেশি। তার স্বপ্ন ছিল ইন্টার্নশিপ শেষে চাকরি শুরু করে সংসার সামলাবেন। কিন্তু একটি বুলেটের আঘাতে তার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
মাহমুদুল হাসানের দুই সহপাঠী শুক্রবার তার নানার বাড়িতে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে আসেন। সায়েম ও সৌরভ হাসান। সৌরভ হাসান তিনি ভিউ ইটিসিকে বলেন, 18 জুলাই সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চার বন্ধু নাস্তা করতে মেস থেকে বের হন। উত্তরা রাজলক্ষ্মীর দিকে যেতেই আচমকা গোলাগুলির শব্দ হল। তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি গুলি মাহমুদুলের মাথায় লাগে। কে কোথা থেকে গুলি করেছে তা তিনি বুঝতে পারেননি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মাহমুদুলকে স্থানীয় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তারা। সেখানে কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা জানান, মাহমুদুল মারা গেছেন।
মাহমুদুলের বাড়ি হাতিয়ায় হলেও তার পরিবার জেলা শহরের মাইজদীর বার্লিংটন মোড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। মাহমুদুল মাইজদীর পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। তার ছোট ভাই একই শহরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে এবং তার ছোট বোন স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।