সাঈদের বুকে গুলি লেগেছে, পুলিশ বলছে উল্টো কথা
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুকে ও পেটে আঘাত পেয়েছেন পুলিশের গুলিতে। তার ঘাড় থেকে উরু পর্যন্ত গুলির ক্ষত ছিল। তবে পুলিশের মামলার প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদনে (এফআইআর) বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের গুলি ও ইটপাটকেলের একপর্যায়ে আবু সাঈদ মারা যান।
ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘সম্পূর্ণ হরতাল’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে আবু সাঈদকে পুলিশ খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাইদ এক হাতে লাঠি নিয়েছিলেন। এবং বুকের কাছে পৌঁছানোর জন্য উভয় হাত প্রসারিত. কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি ভেঙে পড়েন।
রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান রাজিবুল ইসলাম সাঈদের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি গতকাল প্ভিউ ইটিসিকে বলেন, আবু সাঈদের বুকে ও পেটে গুলি লেগেছে
করা হয়েছে লুকানোর কিছু নেই। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। কয়েকদিনের মধ্যে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
তবে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি মামলার এফআইআরে উল্লেখ নেই। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরদিন ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপ-পরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।
মামলার এফআইআর-এ বলা হয়েছে, ‘রাত সোয়া দুইটার দিকে ছাত্র নামক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইট বর্ষণ শুরু করে এবং তাদের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে নির্বিচারে গুলি চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ এপিসি গাড়ি কং/1186 সোহেলের নামমাত্র সরকারী শটগান থেকে 169 রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
সাঈদের মৃত্যু সম্পর্কে বলা হয়, “আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দিক থেকে গুলি ও ইট ছুড়ে মারার একপর্যায়ে এক ছাত্রকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেলে তার সহপাঠীরা তাকে ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ২/৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বিভূতি ভূষণ রায় জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।
যোগাযোগ করা হলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান গতকাল ভিউ ইটিসিকে বলেন, প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়েছে। রিপোর্টে আছে সাঈদের মৃত্যু; তবে তা চূড়ান্ত নয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও চিকিৎসকের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং ঘটনার আশপাশের ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তদন্তে উঠে আসবে।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ঘটনার দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের শেল ব্যবহার করে। কোনো পুলিশকে গুলি করার বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিস্তারিত তদন্তে কোনো পুলিশ সদস্যের গুলি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের দ্বাদশ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবরপুর গ্রামে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আবু সাইদ আহত হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা আক্তার বলেন, সাঈদকে ‘টার্গেট’ করে হত্যা করা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে সাইদের সহপাঠীরা তার কাছে ছুটে আসে। তারা আবু সাঈদকে রিকশায় তুলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের এফআইআর নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ ভিউ ইটিসিকে বলেন, আবু সাইদকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ দেখেছে বিশ্ব। এখন পুলিশ অন্যদের দোষারোপ করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা আরও নষ্ট হবে।