পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুব লীগের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও চারজনের মরদেহ এসেছে। তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
নিহত সাংবাদিক হাসান মেহেদী ঢাকাটাইমস-এ কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, সন্ধ্যার পর তাকে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকা থেকে আনা হয়। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
নিহত অন্য তিনজনের মধ্যে ওয়াসিমকে (৩০) যাত্রাবাড়ী মাছের আস্তানা এলাকা থেকে আনা হয়েছে। তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত নাজমুলকেও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আনা হয়েছে। আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী নাজমুলের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এছাড়া নিহত মোহাম্মদকে আজিমপুর এলাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রায় ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদের শরীরে গুলির ক্ষত রয়েছে।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে হাজির হয়েছেন নাজমুলের স্বজনরা। তাদের দাবি, নাজমুল একজন ব্যবসায়ী। ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক আগে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। সংঘর্ষে তিনি নিহত হন।
এদিকে তাহমিদ তামিম (১৫) ও ইমন মিয়া (২২) নামে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষে আহত অবস্থায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে ইমন ও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাহমিদের মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রাম নগরীতেও সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দার হাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্রলীগ-যুব লীগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন তারা। তাদের একজন পটিয়া সরকারি কলেজের উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র মোহাম্মদ ইমাদ (১৮)। অপর একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার বয়স 22 বছর।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, বিকেলে দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এই আটজনের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন।
সংঘর্ষে নিহত চারজনের মরদেহ রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান প্রথম আলো</em>কে বলেন, চারজনের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী। বাকি দুজনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
এর আগে উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান এবং আরেকজন উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান। দুই হাসপাতালের চিকিৎসক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উত্তরায় সব মিলিয়ে ছয়জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে সংঘর্ষে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারী, যাত্রাবাড়ীতে রিকশাচালক, সাভারে এক শিক্ষার্থী ও মাদারীপুরে এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যায় একজন গুরুতর আহত রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিকশা চালকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তার বয়স প্রায় 30 বছর।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার পর রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের সংঘর্ষ হয়।
ঘটনাস্থল থেকে প্রথম আলোর গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ-কুয়েত ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। আহত হয়েছেন অনেকে।
রাজধানীর আরও কয়েকটি এলাকায় সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। সকালে মেরুল বাড্ডা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পরে তা পার্শ্ববর্তী রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রামপুরায় বিটিভি ভবনে হামলা ও ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ নিয়ে শনির আখড়া এলাকায় সংঘর্ষ চলছে।
এদিকে সকাল থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলছে। বিকেলে সংঘর্ষে ঢাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী নিহত হয়েছেন।