১৪ দিন চিনি না খাওয়ার আশ্চর্যজনক উপকারিতা
পুষ্টিবিদদের গবেষণা অনুসারে, আপনি যদি ১৪ দিন চিনিমুক্ত জীবনযাপন করেন তবে আপনি দুর্দান্ত উপকার পেতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সুবিধাগুলো কী কী।
দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যতালিকায় কোনো না কোনো ধরনের চিনি থাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিনি মদ ও তামাকের মতোই আসক্তি। এর কারণ হল চিনি সরাসরি রক্তের প্রবাহে যায় এবং উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টোজ তৈরি করে, যা নেশা সৃষ্টি করে। আর অতিরিক্ত চিনি খেলে মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই চিনির অপর নাম ‘হোয়াইট পয়জন’ বা সাদা বিষ। আমরা সবাই জানি যে আমরা যে খাবারই খাই, তা চিনিতে পরিণত হয়। ফলে বেশি চিনি বা চিনিযুক্ত খাবার খেলে খুব ক্লান্ত লাগে, মাথা ঘোরা যায়, চিন্তাশক্তি কমে যেতে শুরু করে, শরীরে চর্বি জমতে শুরু করে।
১৪ দিন চিনি না খেলে কি হবে?
১৪ দিন সুগার ফ্রি খেলে হজমের সমস্যা, রাতের ঘুমহীনতা দূর করা যায়। এছাড়াও, আপনি আরও বেশ কিছু আশ্চর্যজনক সুবিধা পাবেন। আপনি যদি ১৪ দিনের জন্য চিনিমুক্ত থাকেন তবে আপনি ধাপে ধাপে আপনার শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করতে পারেন। চলুন জেনে নেই ধাপগুলো-
দিন ১-৩: প্রথম তিন দিন সবচেয়ে কঠিন। কারণ, প্রথমে আপনার শরীরকে চিনি না খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করে কোনো ‘মাদক’ বন্ধ করা হলে তা শরীরে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এ সময় মাথাব্যথা, পেটব্যথা, ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। চিন্তার কিছু নেই, এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ সময় শরীরে চিনির যে ক্ষতিকর উপাদানগুলো জমে ছিল, তা বের করার প্রক্রিয়া শুরু করবে শরীর। কিন্তু শরীরের অন্যান্য সমস্ত প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকবে।
দিন ৪-৭: ফোকাস এবং শক্তি ৪ দিন থেকে বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে আপনি শারীরিক শক্তি এবং মনোযোগ ফিরে পেতে শুরু করবেন। সপ্তম দিনে নিজেকে শক্তিশালী মনে করুন। আপনার মনোযোগ আগের চেয়ে আরও বাড়বে।
দিন ৮-১০: আপনার পাচনতন্ত্র তার শীর্ষে কাজ করতে শুরু করবে কারণ শরীর চিনিমুক্ত। শুরু হবে অষ্টমী থেকে। এটি যখন অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ভারসাম্য খুঁজে পেতে শুরু করে। ফোলাভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা কমতে শুরু করে।
১১-১৪ দিন: ক্ষুধা কমে যাবে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ঘুম ভালো হবে। এ সময় আপনার মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাও কমতে শুরু করবে। চিনি শরীরের ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে, তাই আপনার অনিদ্রা উপশম হবে এবং আপনি ভাল ঘুমাবেন। এ সময় ক্ষুধা কমে গেলে ওজনও কমে যায় কারণ বারবার খেতে ইচ্ছে করবে না।
চিনিমুক্ত থাকার দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা
একটি ১৪ -দিনের চিনি-মুক্ত জীবনধারা শুরু করা কিছু দীর্ঘমেয়াদী সুবিধাও কাটবে। যেমন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যাবে, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যাবে, রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকবে। উচ্চ রক্তে শর্করার মাত্রা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, কিডনির সমস্যা, চোখের সমস্যা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে। ১৪ দিন চিনি না খেলে এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকবে। খাদ্য থেকে চিনি বাদ দেওয়ার ফলে ত্বকের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হবে। ব্রণ ও একজিমা কমতে শুরু করবে। অকাল বার্ধক্য রোধ করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। আপনি মেজাজ এবং স্মৃতিশক্তির উন্নতিও লক্ষ্য করবেন। এছাড়া এটি বিষন্নতার জন্যও ভালো। কাজে মনোযোগ বেশি পাবেন।