বদলে যাচ্ছে পুলিশের ইউনিফর্ম-লোগো, হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা তাদের ১১ দফা দাবি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ওই বৈঠকে পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়।
রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. মইনুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে পুলিশের ১১ দফা দাবির মধ্যে কয়েকটি স্বল্প সময়ের মধ্যে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। অন্যান্য দাবি দীর্ঘ মেয়াদে পূরণ করা হবে. বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে পুলিশের ওপর কোনো হামলা করা যাবে না। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।
উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন পুলিশের সঙ্গে বসার আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলো</em>কে বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, “তারা যে দাবিগুলো পেশ করেছে তা যৌক্তিক। তাই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে তাদের দাবি মেনে নেব। আমরা এখন কিছু দাবি মেনে নেব।
রাজনৈতিক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা নির্দেশ দিয়েছে তাদের চেয়ে পুলিশের দোষ বেশি। তাদের নিয়ে অনেক রাজনৈতিক কাজ হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। পুলিশ সদস্যরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা এখন থেকে সঠিকভাবে কাজ করবেন। এর আগে বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ছাত্ররা আমাকে বলেছে, পুলিশের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, একটি পুলিশ কমিশন থাকতে হবে। ওই কমিশনের অধীনে পুলিশকে ম্যানেজ করা হবে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকবে না। পুলিশ যাতে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকায় অবস্থান করেও কর্মস্থলে না আসা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা প্রথম আলো</em>কে বলেন, সবাই নিজ নিজ কর্মস্থলে যাবেন। তারা তাদের নিজেদের কাজ করবে। কেউ অন্যায় করে থাকলে তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া হবে। সরকার তাদের কথা শুনবে। এরপর তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন তার বসার চেয়ার দেখিয়ে বলেন, ‘এই চেয়ারে একজন হাইকমান্ড (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) ছিলেন। সে কি করেছে? তার হাইকমান্ডও ছিল। এখন আমি যদি বলি, তুমি যদি এটা না করো, আমি তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করব, তাহলে তুমি কী করবে? হুকুম অনেকেই পালন করেছেন। উপরে একজন ছিলেন হাইকমান্ড। সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।
পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তন করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা। পুলিশের অনেকেরই মন খারাপ। পুলিশ আর এই ইউনিফর্মে কাজ করতে চায় না। এটি খুব শীঘ্রই পরিবর্তন করা হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বৈঠক শেষে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়েবুর রহমান পুলিশ ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তারা বলেন, আমরা সরকারের কাছে যেসব দাবি জানিয়েছি তার বেশির ভাগই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। আশা করি, সবাই সুন্দরভাবে নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরবেন।
এ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে বলে জানান এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশের দাবি অনেকাংশেই মেনে নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশের ওপর স্বাধীন কমিশন গঠনের ইতিবাচক ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।