প্ভিউ ইটিসি  | বাংলা নিউজ পেপার
সোমবার , ১২ আগস্ট ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আন্দোলন
  4. আরব নিউজ
  5. ইসলাম
  6. ক্রিকেট
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জয়পুরহাট
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. পরামর্শ
  14. প্রবাস
  15. ফুটবল

ছাত্রদের আন্দোলনে যে স্লোগানে বারুদ হয়ে ওঠে

প্রতিবেদক
ভিউ ইটিসি
আগস্ট ১২, ২০২৪ ২:৫৩ অপরাহ্ণ
ছাত্রদের আন্দোলনে যে স্লোগানে বারুদ হয়ে ওঠে

ছাত্রদের আন্দোলনে যে স্লোগানে বারুদ হয়ে ওঠে
আন্দোলনের ভাষা স্লোগান। কিন্তু স্লোগান আগে থেকে ঠিক করা হয় না। মিছিল-সমাবেশ থেকে স্লোগানের জন্ম হয়। হয়ে ওঠে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতীক।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে আন্দোলন করা হয়। আন্দোলনে বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি স্লোগানও পাল্টে যায়। এসব স্লোগান আন্দোলনকারীদের মধ্যে বারুদের মতো কাজ করে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রেরণা যোগায়।

শুরুতে আন্দোলন ছিল অহিংস। কিন্তু গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। এরপর ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন তীব্র আন্দোলনে রূপ নেয়। সহিংসতা বেড়েছে। শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের এক দফা দাবি উত্থাপন করে শিক্ষার্থীদের সহিংস আন্দোলন সফল হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়।

কোটা সংস্কারের কারণে সরকার পতনের দাবি—৩৬ দিনের এই আন্দোলনের গত তিন সপ্তাহে নতুন স্লোগান তৈরি হয়েছে। দাবির ভাষাও বদলেছে।

‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলল, কে বলল, অত্যাচার, অত্যাচার?’ ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গাড়ি চেত’-এর মতো কিছু বজ্রকণ্ঠ স্লোগান ওঠে।

মধ্যবর্তী তিন সপ্তাহে যেসব স্লোগান শোনা গিয়েছিল তার মধ্যে ছিল ‘ছাইলাম অধিকার ভয়ে, ভয়ে গেমনাম রাজাকার’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ এবং ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’-এর মতো আরও অনেক স্লোগান।

তবে আবু সাঈদের মৃত্যুর পর আন্দোলনের গতি ও এসব স্লোগান তীব্র হয়। গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এরপর থেকে শুরু হয় ‘আমাকে খাও, আমার বুকে গুলি কর’ স্লোগান; ‘তোর কোটা তুমি নে, আমার ভাই ভাভারদে দে’; ‘বন্দুকের ব্যারেল বুকে নিয়ে সংলাপ করে না’ এবং ‘মৃতদেহে জীবন, নইলে গদি তুলে দাও’—এসব স্লোগান। যেখানে অল্প কথায় মানুষের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গী হয় জীবন হারানোর বেদনা।

পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন স্লোগান। আগের প্রজন্মের কথা ও বাক্য বর্তমান প্রজন্মের মুখে উঠে এসেছে। যেমন, গত ২ আগস্ট রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের কোনো স্থান নেই’; ‘আরো একবার বাহাত্তরের যন্ত্র উঠো’; ‘যে হাত গুলি করে, সেই হাত ভাঙো’ এবং ‘অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’।

৩ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে বিক্ষোভ থেকে শোনা গেল ‘আমার ভাই কবরে, খুনিরা বাইরে কেন’; ‘আমার ভাইকে কারাগারে কেন’, ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’- এসব স্লোগান।

সায়েন্স ল্যাব মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শোনা যায় ‘জাস্টিস, জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘জলো রে জলো, আগুন জ্বালা’ এবং ‘দিয়াছি তো রক্ত, আর দেব রক্ত’-এর মতো স্লোগান।

অন্য অনেকের মতো রিকশাচালকরাও ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন। ৩ আগস্ট দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ‘গুলি চালিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না’; ‘রক্তের বন্যায়, অন্যায় ভেসে যাবে’; রিকশাচালকরা ‘তুমি কে আমি রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার’, ‘ভাইয়ের রক্ত ​​বৃথা যেতে দেব না’ স্লোগান দেন।

১৫ জুলাই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে খায়া স্বৈরাচার স্বৈরাচার’ স্লোগান আন্দোলনকে নতুন গতি দেয়।

তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে স্লোগান, ‘বুকে অনেক ঝড়, বুকে গুলি।’ আর এসব স্লোগান নিয়ে কথায় কথায় লেখা স্লোগানগুলো একই গতিতে মিছিল করেছে। তারা মানুষের হাতে ছিল।

মিছিলে মানুষ প্ল্যাকার্ড, পোস্টার, ব্যানারে কবিতার লাইন লিখেছিল। হেলাল হাফিজকে নিয়ে জহির রায়হানের লেখা কবিতা ছিল। কার্টুনে উঠে এসেছে ব্যঙ্গচিত্র।

কিন্তু এর বিপরীত স্লোগান রয়েছে। আছে প্রতিবাদের প্রতিবাদ। উদাহরণস্বরূপ, 17 জুলাই, 423 জন সাবেক ছাত্রনেতা আন্দোলনকারীদের ‘অহংকারী ও উসকানিমূলক’ স্লোগানের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি জারি করেন। সেখানে তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলা, রাজাকারের স্থান নেই’ স্লোগান দেন।

ছাত্রদের স্লোগান মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। প্ল্যাকার্ডে সেসব স্লোগানও লেখা ছিল। ‘অবিশ্বাস অবিশ্বাস, স্বৈরাচারে অবিশ্বাস’; “এই চোখের আগুন দেখো, দ্বিগুণ হবে”; “তবে তা হোক, মানুষ নিকের শেষ দেখতে পাবে”; “আমরা মানুষ, আমরা ক্ষমতা কম বুঝি”; ‘তুমি বড় হবে গোকুলে’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; “হাস না, আমার বন্ধু, কিন্তু জোরে তোমার আওয়াজ বাড়াও”; ‘আপনার অধিকারের জন্য লড়াই করুন’; হাতে ছিল ‘নিউটন বোমা বোঝে মানুষ বোঝে না’-এর মতো ব্যাঙ্গাত্মক প্ল্যাকার্ড।

 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীর প্রাণহানির সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সাথে সাথে স্লোগান আরও জোরে বাড়তে থাকে।

গুলিতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারানোর পর শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান শোনা যায়। তাদের মধ্যে একটি আঞ্চলিক স্লোগান, ‘আন না হায়্যে, বাউতদিন হায়্যে’ (আর খাবেন না, আপনি অনেক দিন ধরে খেয়েছেন) ব্যাপকভাবে আলোচিত। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এই স্লোগান শোনা যাচ্ছে ২রা আগস্ট থেকে।

‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ থেকে শুরু করে 2018 সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া, ‘যদি তুমি ভয় করো, তুমিই শেষ, তুমি দাঁড়ালে, তুমি বাংলাদেশ’-এর মতো শত শত স্লোগান প্রত্যক্ষ করেছে। জনগণের দাবি ও আন্দোলনের ইতিহাস। শুধু রাজনীতি নয়, স্লোগান লেখা হয় সমাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ নিয়ে।

আন্দোলনে স্লোগান কতখানি গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে শত বছর আগের একটি ঘটনার উল্লেখ করা যাক। সে সময় আইন করে এই বাংলায় একটি স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিল ব্রিটিশরা। এর প্রতিবাদ জানাতে তৎকালীন বাখেরগঞ্জ জেলার (বর্তমানের বরিশালের অংশ) নারীরা চুল বাঁধা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। অভিনব এই প্রতিবাদের কথা ইতিহাসে লেখা আছে। শিশির কর সম্পাদিত ‘ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই’-এ এক প্রবন্ধে পাওয়া যাবে এই ঘটনার বর্ণনা।

সর্বশেষ - ক্রিকেট