প্ভিউ ইটিসি  | বাংলা নিউজ পেপার
রবিবার , ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অপরাধ
  2. আন্তর্জাতিক
  3. আন্দোলন
  4. আরব নিউজ
  5. ইসলাম
  6. ক্রিকেট
  7. খেলাধুলা
  8. চাকরি
  9. জয়পুরহাট
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. পরামর্শ
  14. প্রবাস
  15. ফুটবল

শূন্য আসনে ফুল? আহনাফের আর পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি,

প্রতিবেদক
ভিউ ইটিসি
আগস্ট ১৮, ২০২৪ ৮:২৪ অপরাহ্ণ
বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের (১৭) শূন্য আসনে ফুল রেখে শিক্ষকদের শ্রদ্ধা

শূন্য আসনে ফুল? আহনাফের আর পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি,

রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির স্থগিত পরীক্ষা আজ রোববার থেকে আবার শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে আসে। একটি মাত্র আসন খালি রয়েছে। সেখানে রাখা ফুলের তোড়া।

আসনটি শফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফের (১৭)। ৪ আগস্ট ছাত্র বিদ্রোহে নিহত হন তিনি। মিরপুর-১০ এ তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বুলেটটি তার বুকের ডান পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

আহনাফ ১১ শ্রেণির ব্যবসায়িক ছাত্র ছিল। ছাত্র অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সহিংসতায় অন্তত ৬২৬ জন নিহত হয়। তাদের মধ্যে ৬৮ জন শিশু ও কিশোর। আহনাফ তাদের একজন।

কলেজের পরীক্ষার সময় ফাঁকা সিটে ফুলের তোড়া রেখে আহনাফের শিক্ষকরা তাকে স্মরণ করেন। তোড়ার পাশে সাদা কাগজে লেখা ছিল আহনাফের নাম।

শিক্ষকরা জানান, গত ২ জুলাই কলেজে একাদশ শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। তিনটি পরীক্ষার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পরীক্ষা স্থগিত। আজ থেকে স্থগিত পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

বিএএফ শাহীন কলেজের উপাধ্যক্ষ শাকিলা নার্গিস ভিউ ইটিসি কে বলেন, শিক্ষকরা মনে করেন আহনাফের স্মরণে কিছু করা উচিত। তাকে ভালোবেসে কলেজের পক্ষ থেকে শূন্য আসনে ফুল দেওয়া হয়। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে কলেজের দৈনিক সমাবেশে আহনাফের স্মরণে দোয়া করা হয়। কলেজ গেটে তার নামে একটি ব্যানারও টাঙানো হয়েছে।

শাকিলা নার্গিস আরও বলেন, নিহত আহনাফের সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেওয়া এ কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী ২০ আগস্ট কলেজে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আহনাফের পরিবার রাজধানীর মিরপুর-১ এর কাছে মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় থাকে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি স্থানীয় মডেল একাডেমি স্কুলে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। তিনি মিরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হন। আহনাফ নিহত হওয়ার পর মডেল একাডেমি স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের খেলার মাঠের নাম দেয় ‘শহীদ আহনাফ খেলার মাঠ’।

আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদ ও মা সাফাক সিদ্দিকী। তাদের দুই ছেলের মধ্যে আহনাফ ছিলেন বড়। ছোট ছেলে ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।

আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন আহমেদ ভিউ ইটিসি কে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে খালি সিটে ছেলের তোড়ার ছবি ‘শেয়ার’ করেছেন অনেকে। এমনটাই জানিয়েছেন আহনাফের মা। এরপর থেকে আহনাফের মা শুধু কাঁদছেন। বারবার বলছেন, ‘আজ আমার ছেলের পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।’

নাসির উদ্দিন আহনাফকে হত্যার দিন সম্পর্কে বলেন, তিনি সবসময় বলেছিলেন যে তিনি বড় হয়ে এমন কিছু করবেন যা তার পরিবারের সদস্যদের গর্বিত করবে। ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সোচ্চার। অন্যান্য দিনের মতো গত ৪ আগস্ট তিনি মিরপুর-১০-এ বিক্ষোভ করতে যান। ছেলের শুটিংয়ের খবর তারা জানতেন না। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে আহনাফের মরদেহ পাওয়া যায়।

যেদিন আহনাফকে হত্যা করা হয় (৪ আগস্ট) আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে বিক্ষোভ থামিয়ে দেয়। মিরপুর-১০ আসনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নেমে পড়েছেন। তাদের কারও কারও কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে তারা কয়েক ঘণ্টা পর মাঠ ত্যাগ করে।

৪ আগস্ট সারাদেশে অন্তত ১১১ জন নিহত হন। সেদিন মিরপুরে কয়েকজন মারা যান। তাদের একজন আহনাফ।

প্রথম আলো ১ আগস্ট পর্যন্ত নিহত ২১২ জনের মধ্যে ১৭৫ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। এতে দেখা গেছে, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। আজ থেকে পুরোদমে পাঠদান ও পরীক্ষা শুরু হলে আর ফিরে আসেননি আহনাফরা।

বিএএফ শাহীন কলেজের অর্থ বিভাগের প্রভাষক বোরহান উদ্দিন প্রথম আলোকে আহনাফের শূন্য আসনের ছবি দেন। ছবিতে পরীক্ষা কেন্দ্রের চতুর্থ সারিতে বাম পাশে আহনাফের আসনের বেঞ্চে ফুলের তোড়া রাখা আছে।

আরও পড়ুন: ইয়ামিনের কবরে মায়ের লাগানো তুলসী গাছ দীর্ঘজীবী হোক

আহনাফ এবং তার মা সাফাক সিদ্দিকীর জন্ম একই দিনে, ১৩ অক্টোবর। আহনাফের বাবা নাসির উদ্দিন বলেন, আহনাফ খুব উত্তেজিত যে অক্টোবরে তার বয়স ১৮ হবে। তিনি বলতেন, ‘এখন জাতীয় পরিচয়পত্র পাব।

এ কথা বলে নাসির উদ্দিন কাঁদতে থাকে। তিনি বলেন, ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্র আনতে যাচ্ছিলাম। আর ছেলের ডেথ সার্টিফিকেট আনলেন!

সর্বশেষ - ক্রিকেট