এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভেতরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এমনকি প্রার্থীদের অনেকেই এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, পরীক্ষা না নিয়েই ফল প্রকাশ করা হলে তা খারাপ নজির তৈরি করবে, যা পরবর্তী জীবনে শিক্ষার্থীরা ভোগ করবে।
তবে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যুক্তি হলো, অনির্দিষ্টকালের জন্য পরীক্ষা স্থগিত করায় পরিস্থিতি তাদের মানসিক চাপের সৃষ্টি করেছে। এ ছাড়া কোটা আন্দোলনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত নয়। অনেক সহপাঠী আহত, হাসপাতালে ভর্তি। এ অবস্থায় তারা স্থগিত পরীক্ষা দিতে চান না। তাই তারা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত পরীক্ষা ও স্থগিত বিষয়গুলো একত্রিত করে (ম্যাপিং) করে HSC ফলাফল প্রকাশের পক্ষে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সবাই পাস করে। এরপর এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। , জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
,,,,
এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। তাই কঠিন হলেও পরীক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। সরকারেরও পরীক্ষা নেওয়া দরকার ছিল
আমিরুল আলম খান, সাবেক চেয়ারম্যান, যশোর শিক্ষা বোর্ড
নটরডেম কলেজের সাধারণ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে দেওয়া একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তারা বলছেন, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই এইচএসসির ফলাফল মূল্যায়ন করা উচিত। সব মিলিয়ে তাদের অবস্থান পরীক্ষার পক্ষে। তবে তারা বলছেন যে শুধুমাত্র আহত (ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত) ছাত্রদের তালিকাভুক্ত করা উচিত এবং তাদের বিষয় ‘ম্যাপিং’ বা ‘অটোপাস’ করা উচিত এবং তারা মনে করেন যে পরীক্ষার মাধ্যমে বাকি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নই সমাধান। এই সমস্যায়
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৪৫ হাজারের মতো। গত ৩০ জুন পরীক্ষা শুরু হয়। সাতটি পরীক্ষাও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় কয়েকবার পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি পরীক্ষা বাকি ছিল। কোনো ব্যবহারিক পরীক্ষা ছিল না। এরই মধ্যে ৫ আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যদিও তা হয়নি। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের দিন বিভিন্ন এলাকায় থানায় হামলা হয়। থানায় রাখা প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য ১১ আগস্টের পরিবর্তে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
তবে আন্দোলনরত পরীক্ষার্থীরা বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের দাবি জানান। এ দাবি নিয়ে গত সোমবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেন পরীক্ষার্থীরা। এরপর দাবি আদায়ে মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের সামনে আসেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা সচিবালয়ের পূর্ব গেট দিয়ে প্রবেশ করে।
একপর্যায়ে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভবনের নিচে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে’, ‘আমার দাবি একটাই, পরীক্ষা বাতিল’, ‘পরীক্ষা নেই বিকল্প বিকল্প’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সভাপতিত্বে বিকেলে এইচএসসি ও সমমানের বাকি পরীক্ষাগুলো অর্ধেক প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। অন্য কথায়, আগে যদি আটটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তাহলে চারটির উত্তর দিতে হবে। এ ছাড়া সংশোধিত সময়সূচি অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষা আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণে তারা এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। বিকেল চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ১৮ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান। শিক্ষার্থীরা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কার্যালয় ঘেরাও করে সেখানে অবস্থান নেয়। এ অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। তিনি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতিও। তপন কুমার সরকার বলেন, স্থগিত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এখন কীভাবে ফলাফল দেওয়া হবে, তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নানা প্রতিক্রিয়া
ওই সিদ্ধান্তের পর থেকেই নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নটরডেম কলেজের সাধারণ এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে দেওয়া একটি বিবৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
স্থগিত পরীক্ষা বাতিল হওয়ার সিদ্ধান্তটি ভালো নজির হবে না বলে মনে করেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এতে শিক্ষার্থীদেরই ভুগতে হবে। তাই কষ্ট হলেও পরীক্ষা দেওয়া উচিত ছিল। সরকারেরও পরীক্ষাটি নেওয়া দরকার ছিল।