২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন, লক্ষ্মীপুরে বন্যার পানি আরও বেড়েছে,
লক্ষ্মীপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ শুক্রবার জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যার পানির উচ্চতা গতকালের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ উপড়ে পড়ায় অনেক স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন। শুক্রবার বিকেলে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
টানা কয়েকদিনের বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলার মেঘনা নদী ও খালের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় পথ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। জেলার পাঁচ উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। যেদিকে চোখ যায় শুধু জল আর জল। গ্রামের পর গ্রাম, মাঠ মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
আরও পড়ুন: বন্যার্তদের পাশে সেনাবাহিনী খাগড়াছড়িতে
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গ্রাহক রয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে তিন দিন ধরে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলায় ১৩টি পাওয়ার সাবস্টেশন রয়েছে। কেন্দ্রগুলো পানির ছোঁয়ায়। পানি বেড়ে গেলে জেলায় পুরো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় অনেক বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়েছে। তারগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আসাদুজ্জামান খান
এদিকে টানা পাঁচ দিনের টানা বর্ষণে লক্ষ্মীপুরের প্রায় ৪০ হাজার পুকুর তলিয়ে গেছে এবং প্রায় সব মাছ ভেসে গেছে। জেলায় মৎস্য খাতে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন
কে বলেন, জেলায় প্রায় ৫৪ হাজার চাষের পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ৪০ হাজার পুকুর তলিয়ে গেছে এবং ৯০ শতাংশ মাছ ভেসে গেছে। ভেসে গেছে ৫ হাজার ৩০০ হেক্টর চাষের মাছ। এতে জেলেদের প্রায় ৮০ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়তে পারে।আরও পড়ুন: ৭০ ও ৮০ বছরেও এত পানি দেখিনি, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান জানান, নদী ভাঙ্গলে জলাবদ্ধতা নিরসনে সব স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়। আবার জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক তাদের কর্মীরা পর্যবেক্ষণে থাকেন। মেঘনা নদীর পানি এখনো সীমান্তের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিচু ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। এক বা দুই দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে পানি কমতে পারে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।