পলক মিথ্যাচার করেছে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে জাতির সাথে প্রতারণা করেছে
কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিগত সরকার সারাদেশ ইন্টারনেট বিহীন করে রেখেছিল। ওই সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডাটা সেন্টার পোড়ানো, ইন্টারনেট বন্ধসহ নানা গল্প ছড়িয়েছিলেন। আসলে কিছুই হয়নি। তিনি নিজে, বিটিআরসি ও এনটিএমসি ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে জড়িত। ডাটা সেন্টারের ঘটনা প্রচার করে জাতির কাছে মিথ্যাচার করেছেন পলক।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধের সঙ্গে কারা জড়িত তা জানতে গত ১১ আগস্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ ও ১৬ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট, ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই ও ৫ আগস্ট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ও খোলার ক্ষেত্রে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসনিক অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মৌখিক নির্দেশে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মো. মহিউদ্দিন আহমেদের নির্দেশে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে 17 জুলাই থেকে 28 জুলাই এবং 5 আগস্ট পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ এবং সক্রিয়করণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এর নির্দেশনায় করা হয়েছিল।
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, ওই সময়ের মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ এবং ডেটা সেন্টারে আগুন লাগার মধ্যে কোনো সংযোগ ছিল না। সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ডাটা সেন্টারের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার ও প্রতারণা করেছেন।
ইন্টারনেট বন্ধ করার বিষয়ে পলকের কথা
কোটা সংস্কারের আন্দোলন যখন চরমে, সারাদেশ ইন্টারনেট বিহীন, তখন ডাটা সেন্টারে আগুন, সাবমেরিন ক্যাবলের ক্ষতি নিয়ে কথা বললেন জুনাইদ আহমেদ পলক। এ সময় মানুষের ফোনে সরকারি বার্তা পাঠানো হয়, ‘সন্ত্রাসীদের আগুনে ডাটা সেন্টার পুড়ে গেছে, আইএসপির ক্যাবল পুড়ে গেছে, সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হয়েছে, মেরামত করতে সময় লাগবে। এটা।”
18 জুলাই জুনায়েদ আহমেদ পলক মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সহযোগিতা করলে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতে হতো না।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও 18 জুলাই রাত 9 টা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মহাখালীতে অবস্থিত ডাটা সেন্টারটি ১৮ জুলাই বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া সারাদেশে শত শত কিলোমিটার ফাইবার ক্যাবল পুড়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৭ জুলাই আগারগাঁওয়ের ডাক ভবনে এক অনুষ্ঠানে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, মহাখালীর তিনটি ডাটা সেন্টারে আইএসপির (ভোক্তা পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান) ৭০ শতাংশ সার্ভার রয়েছে। দেশের 34টি আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) এর মধ্যে 18টির ডেটা এই তিনটি ডেটা সেন্টারে হোস্ট করা হয়েছে। সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করেনি। ইন্টারনেট ডাউন। এমনকি 23 জুলাই মহাখালীতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে গিয়েও তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণে ডাটা সেন্টারটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর তারা ইন্টারনেট বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
তবে জুনাইদ আহমেদ পলক ২৮ জুলাই বলেন, বাংলাদেশ ইন্টারনেট থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়। তিনি বলেন, সরকারের কেপিআই-এর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও জরুরি সেবাগুলোতে সর্বদা ইন্টারনেট চালু ছিল। তিনি আরও বলেছিলেন যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামো ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনই ইন্টারনেট বন্ধ করার পক্ষে নই। আমরা কোনো অ্যাপ বন্ধ করি না।’
ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি টানা ১৩ দিন বন্ধ ছিল সোশ্যাল মিডিয়া। প্ল্যাটফর্ম চালু না হওয়া প্রসঙ্গে জুনাইদ আহমেদ বলেন, কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল আচরণ এবং দেশের আইন মেনে চললে ফেসবুক চালু করা হবে; কিন্তু তিনি নিজে ফেসবুক থেকে শুরু করে প্রায় সব মিডিয়াতেই সক্রিয় ছিলেন।